ঢাকা কবি নজরুল কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউছার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। ১৭ ও ১৮ জুলাই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায়, শিক্ষার্থীদের মেসগুলোতে রান্না বন্ধ ছিল। দুদিন না খেয়ে থাকার পর শুক্রবার (১৮ জুলাই) দুপুরে ইকরাম খাবারের জন্য মেস থেকে বের হন। জুমার নামাজ শেষে সড়কের পাশে এক ঠেলাওয়ালার দোকান থেকে ভাত খায়। পরে রাতের জন্য একটি বিস্কুটের প্যাকেট কিনে সড়ক পার হচ্ছিলেন। এ সময় পিছন থেকে মাথায় গুলি করে পুলিশ। মুহূর্তেই ইকরামের মগজ ছিটকে পড়ে সড়কে। সেই ঠেলাওয়ালা দ্রুত এগিয়ে গিয়ে মগজগুলো পলিথিনে ভরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন
ইকরামের ছোট ভাই ইমরান হোসেন ফারুক এভাবে বড় ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি জানান, মৃত্যুর ২০ মিনিট আগেও ইকরাম বাড়িতে ফোন করেছিলেন। বিদ্যুৎ না থাকায় তার মোবাইলে চার্জ ছিল না। সেই ঠেলাওয়ালার ফোন থেকে বাড়িতে ফোন করে ইকরাম জানায় যে, সে ভালো আছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাড়ি ফিরে আসবে। এই ঠেলাওয়ালাই ইকরামের মৃত্যুর সংবাদ বাড়িতে জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
ইকরামের বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, সামান্য স্কুলশিক্ষক হয়ে তিনি তিন সন্তানকে পড়ালেখা করাচ্ছিলেন। ইকরাম এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ঢাকা কবি নজরুল কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স পড়ছিলেন। জমি বিক্রি করে ছেলের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছিলেন। ইকরামের স্বপ্ন ছিল মাস্টার্স শেষ করে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া। পুলিশের গুলিতে তার সেই স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হলো। এই হত্যার দায় কে নেবে? ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে শুক্রবার রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তার মা-বাবা। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ নিয়ে এসে রাতেই নিজ এলাকায় দাফন করা হয়।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের : দেশব্যাপী শোক প্রত্যাখ্যান
ইকরামের বোন জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, আমাদের পরিবার খুবই গরিব। পড়ালেখা শেষ করে ইকরাম পরিবারে হাল ধরবে এবং আমাদের দুঃখ ঘোচাবে এমনটাই আশা করেছিলাম। এখন আমার ভাই নেই, আমাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। আমরা আশা করবো সমাজের বিত্তবানরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবেন।